নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বিশাল বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে বিলাসী কিছু পণ্যের শুল্ক বাড়ানো হলেও নিতপণ্যের শুল্ক-করা এবার তেমন একটা বাড়ানো হয়নি। তা ছাড়া বিলাসী যেসব পণ্যের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন হবে নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে, অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই থেকে। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পরদিন শুক্রবার রাজধানীর বাজার গরম হয়ে পড়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা মাছ, মুরগি, ডিম, সবজিসহ অনেক নিত্যপণের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও বাজারে এ বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতার। কেউ বলছেন, যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে তার সঙ্গে বাজেটের কোনো সম্পর্ক নেই আবার কেউ বলছেন বাজেটের কারণেই দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজেটের কারণ দিখিয়েই কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা।
বাজারে সবজি ভরপুর থাকলেও শুক্রবার প্রায় সবধরনের সবজির দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা। পাশাপাশি দাম বেড়েছে মুরগি, ডিম এবং মাছের। বাজেটে আমদানি করা পেঁয়াজের সামান্য শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, যাতে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষক ভালো দাম পায়। কিন্তু পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা মনে করছেন পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাবে, তাই অনেকে আবার পেঁয়াজ মজুদ করার চেষ্টা করছে। তবে শুক্রবার বাজারে দাম অপরিবর্তিত দেখা গেছে চাল-ডাল-তেল-চিনি-লবণসহ অন্যান্য পণ্যের দাম। যদি বাজেটে চাল-চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে। এ কারণে এসব পণ্যের দাম কমবে আগামীতে।
সবজির বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে বাজারে বর্তমানে পটোল ৪৫-৫৫, ঝিঙা-চিচিঙ্গা-ধন্দুল ৫০-৬০, কাঁকরোল ৬০-৭০, করলা ও উস্তা ৬০-৭০, কচুর ছড়ি ৫০-৬০ টাকা। ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতিকেজি টমেটো ৫০-৬০, পেঁপে ৫০-৬০, ঢেঁড়স ৪০-৫০, কচুর লতি ৫০-৬০, বেগুন ৬০-৮০, কাঁচামরিচ ৬০-৭০, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা কবীর হোসেন জানান, বর্তমানে অনেক সবজির সিজন না হওয়ায় সেগুলোর বাড়তি দাম রয়েছে পাইকারি বাজারে। তা ছাড়া সবজির দাম সরবরাহের ওপরও নির্ভর করে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন বৃষ্টি হচ্ছে। এতে অনেক সবজির ফসল নষ্ট হচ্ছে। এজন্য বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এজন্যই মূলত বাড়ছে সবজির দাম। তিনি আরও বলেন, সবজির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে বাজেটের কোনো সম্পর্ক নেই।
গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫৫-১৬০, লেয়ার ২২০, সাদা লেয়ার ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৮০, দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকায়। আর প্রতি ডজন লাল ডিমে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০, দেশি মুরগির ডিমি ১৪০-১৫০, সোনালি মুরগির ১২০-১৩০, হাঁসের ১১৫-১২৫, কোয়েল প্রতি ১০০ পিস ডিম ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দাম বৃদ্ধি বিষয়ে কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. কালাম জানান, বাজেটের কারণে দাম বাড়ছে মুরগি ও ডিমের। কিন্তু বাজেটের সঙ্গে মুরগির দাম বৃদ্ধির সম্পর্ক কী, বাজাটে তো মুরগির বা মুরগির খাবারের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়নি। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এত কিছু জানি না, পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর বিষয়টি বলেছেন এবং তারা বাড়তি দামে মুরগি বিক্রি করছেন। তাই আমরা বাড়তি দাম রাখছি।
দাম বাড়তি রয়েছে মাছের বাজারেও। কেজিতে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মাছের দাম। বাজারে দাম বেড়ে প্রতিকেজি কাঁচকি মাছ ৩৮০-৪২০, মলা ৪০০-৪৫০, বড় পুঁটি (তাজা) ৫৫০-৬০০, ছোট পুঁটি ৩০০-৪০০ তাজা, টেংরা মাছ (তাজা) ৭০০-৮০০, দেশি টেংরা ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি শিং (আকারভেদে) ৩০০-৫৫০, পাবদা ৩২০-৫৫০, চিংড়ি (গলদা) ৪০০-৭০০, বাগদা ৫৫০-১০০০, হরিণা ৪০০-৫৪০, দেশি চিংড়ি ৩৫০-৫৫০, রুই (আকারভেদে) ২৫০-৩৫০, মৃগেল ২০০-৩২০, পাঙ্গাশ ১৫০-২০০, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০, কৈ ১৮০-২০০, কাতল ২০০-৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১০০০-১০৫০, ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭৫০-৮০০ ও ছোট ইলিশ আকারভেদে ৩৮০-৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে দাম কমেছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের। কেজিতে ৫ টাকা কমে এসব বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫, কেজিতে ২০ টাকা কমে রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০, কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে (মানভেদে) ১৪০-১৫০ টাকায়।
বাজেটের পর কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজেটের সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির তো কোনো সম্পর্ক আমি দেখি না। কারণ নিত্যপণ্যের ওপর তো এবার তেমন কোনো শুল্ক আরোপ হয়নি বাজেটে। তা হলে ব্যবসায়ীরা কেন দাম বাড়াবে। আমি মনে করি যারা পণ্যের দাম বাড়িয়েছে তারা অবিবেচনাপ্রসূত কাজ করেছে। এ ধরনের ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সরকারের।